নিজের ফাঁদেই ধরা বিএনপি


রাজশাহী নগরীর সাগরপাড়া বটতলা এলাকায় গত ১৭ জুলাই সকালে বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের গণসংযোগস্থলে ককটেল বিস্ফোরণ মামলায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে মহানগর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও বোয়ালিয়া থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

মন্টু ফোনালাপে দাবি করেন, দলের কাছে ক্রেডিট নিতে গিয়ে নিজেদের লোকদের দিয়েই এ হামলা চালানো হয়েছে। মন্টু ওই ঘটনায় বিএনপির কোন কোন নেতা জড়িত, তা বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক তায়েফুর রহমান টিপুর কাছে মোবাইল ফোনালাপে স্বীকার করেন। এরপর পুলিশ ওই কল রেকর্ড হাতে পেয়ে মন্টুকে গ্রেপ্তার করে। গতকাল রবিবার সেই কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। গ্রেপ্তারের পর গতকাল দুপুরে আরএমপির সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে মহানগর পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ সময় মতিউর রহমান মন্টুর সঙ্গে বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক তায়েফুর ইসলাম টিপুর ফোনালাপটি সাংবাদিকদের শোনানো হয়।

পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘ককটেল হামলার পর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের চৌকস কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে বিশেষ একটি দল গঠন করা হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তখনই একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। এতে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাই। একপর্যায়ে তদন্তকারী দল মামলাসংশ্লিষ্ট একটি ফোনের কথপোকথনের অডিও রেকর্ড হাতে পায়। যেখানে রাজশাহী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মতিউর রহমান মন্টু বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা তায়েফুর রহমান টিপুর কাছে ককটেল হামলায় নিজেদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। মন্টু ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুজনকে নিজেদেরই লোক বলে উল্লেখ করেন। যাদের মধ্যে একজন নাটোর, অন্যজন রাজশাহীর বাসিন্দা।’

পুলিশ কমিশনার আরো বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সুষ্ঠু নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার লক্ষ্যে জনগণের সহমর্মিতা অর্জন ও তাদের নিজেদের দিকে টানতে নিজেরাই পরিকল্পিতভাবে এ ককটেল বিস্ফোরণটি ঘটায়। প্রকৃত ঘটনা জানতে মতিউর রহমান মন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমাদের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তি, পরিকল্পনাকারী, মদদদাতা ও সহযোগীদের গ্রেপ্তার করে প্রচলিত আইনে বিচারের আওতায় আনা হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘মন্টু নিজেই স্বীকার করেছেন, ঘটনাটি সম্পর্কে তিনি জানেন এবং অন্যকেও তিনি এ নিয়ে চেপে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কাজেই তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ঘটনার সঙ্গে আর কারা জড়িত, সেটি খুঁজে বের করা হবে।’

বিএনপি নেতা মতিউর রহমান মন্টু ও তায়েফুর ইসলাম টিপুর ফোনালাপটি তাঁদেরই কি না, এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘মন্টুকে আমাদের চেয়ে আপনারাই ভালো চেনেন। কাজেই আপনারাই বলুন, এটা অন্য কারো হতে পারে কি না? তবে আমরা নিশ্চিত, এটি মন্টুর কণ্ঠ।’

এদিকে তায়েফুর রহমান টিপুর সঙ্গে মন্টুকে বলতে শোনা যায়, ‘কালকে কামকাজ করে প্রচুর গরমে শরীরটা অসুস্থ। গত পরশু দিন যে ঘটনা ঘটেছে শুনছো তো? জবাবে টিপু বলেন, ‘একটু শুনেছি, বেশি কিছু শুনিনি। মন্টু বলেন, পেপারপত্রিকায় এসেছে। টিপু বলেন, ‘ওই বোমা ফাটানো কথা?’

মন্টু বলেন, ‘হে, কারা করল তুমি কি জানো?’ টিপু বলেন, ‘তা জানি না।’ এরপর মন্টু বলেন, ‘যাক আমি যে কথা বলব, সেটা হজম করবা। জায়গামতো পারলে বলবা। দুই ভাই জড়িত। আমাদের দুজন জড়িত। বিএনপির লোকদের দিয়ে কাজ করানো হয়েছে। ভাইয়ার কাছে ‘ক্রেডিট’ নেওয়ার জন্য আমাদের নিজেদের লোকদের দিয়ে এ কাজ করানো হয়েছে। ঠিক আছে? জবাবে টিপু বলেন, কোন দুই ভাই? এরপর মন্টু বলেন, তোমার নাটোর আর আমাদের রাজশাহীর শাহীন। এরপর টিপু বলেন, ‘এটা আমার বিশ্বাস হয় না। জাবেদ হলো, আমার শাহীন শওকত ভাইয়ের লোক।’ টিপু আবারও বলেন, ‘এটা আমার বিশ্বাস হয় না।’

এদিকে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ইফতে খায়ের আলম জানান, পথসভা চলাকালে ককটেল হামলার ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় আটজনের বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া থানায় মামলা করা হয়। বোয়ালিয়া মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম হোসেন বাদী হয়ে ওই দিন রাতেই থানায় বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলাটি করেছিলেন।

এদিকে বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল দাবি করেন, তাঁর প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মন্টুকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে নতুন কোনো মামলা নেই। এটি নির্বাচনে বিএনপি নেতাকর্মীদের আটকেরই একটি অংশ। তাঁর ফোনালাপের বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য নয়।

প্রসঙ্গত, ঘটনার পরপরই বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানর রহমান মিনুও ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুই ব্যক্তির নাম মিডিয়ার কাছে প্রকাশ করেন। যাদের মধ্যে জাবেদের নামটিও ছিল।–কালের কন্ঠ